শিশুদের খাবারের রুচি বাড়ানোর ২০ টি উপায়

সুস্থ বাচ্চা কে না চায়? আসলে আমরা সবাই চাই আমাদের বাচ্চারা সারাক্ষণ সক্রিয় এবং সুস্থ থাকুক। তবে সমস্যাটি হচ্ছে বেশিরভাগ বাচ্চাই ভালভাবে খেতে চায় না। ফলস্বরূপ, এটি তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।

'খাবারের প্রতি শিশুর রুচি কীভাবে বাড়ানো যায়?' এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন যা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রূপে বাবা- মায়েরা জিজ্ঞাসা করেন। খাবারের অরুচির কারণ এবং সমাধানগুলি একবার দেখে নিন:

মায়েদের কিছু সাধারণ অভিযোগ:

  • তাদের বাচ্চারা পর্যাপ্ত পরিমাণে খায় না।
  • তারা তাদের পছন্দের খাবার বারবার খেতে পছন্দ করে। 
  • যে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তারা বুকের দুধ ছাড়া অন্য খাবার পছন্দ করে না।  
  • তারা শাকসবজি এবং ফল খেতে চায় না। 

 

খাবারে অরুচির কারণ:

সমাধান:

  • শুরু থেকেই শিশুর খাবারের ব্যাপারে আপনাকে একটি সঠিক পরিকল্পনা বা নিয়ম মেনে চলতে হবে। সন্তানকে দৈনিক ৫ বার খেতে দিতে হবে। সকালের নাস্তা,দুপুরের মধ্যাহ্নভোজ এবং রাতের খাবারের পাশাপাশি ২ বার স্ন্যাকস দিতে হবে। 
  • রঙিন প্লেটে খাবার পরিবেশন করুন। এটি খাবারের প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।
  • সকালের নাস্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের সন্তানকে সকালের নাস্তায় ওটমিলের সাথে খেজুর আর কিছু বাদাম গুঁড়া মিশিয়ে দেই। সে এটি খুব উপভোগ করে। সকালের নাস্তা কখনই এড়িয়ে যাবেন না। স্বাস্থ্যকর নাস্তা শিশুর খাবারের রুচি বাড়ায়। এটি বাচ্চাদের সারা দিন সক্রিয় রাখে। 
  • আপনার শিশু কতটা খাবে সেটা সেই নির্ধারণ করবে। বাচ্চারা সহজে নতুন খাবার গ্রহণ করতে পারে না। আপনার ধৈর্য্য রাখতে হবে এবং মাঝে মাঝে শিশুকে নতুন ধরণের খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। অবশেষে আপনার বাচ্চা খাবারটি পছন্দ করবে। 
  • আমরা আমাদের ২২ মাসের শিশুকে বিভিন্ন ধরণের খাবার দেই যেমন লাল চালের ভাত, মুরগী, গরুর মাংস, মাছ, ডিম, দই, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম এবং ওটস ইত্যাদি। এজন্যই সে প্রথম থেকেই খেতে ভালোবাসে। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে আপনার সন্তান তার খাবার থেকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে শর্করা, আমিষ, খনিজ, ফ্যাট এবং ভিটামিনের চাহিদা মেটাতে পারে। আমাদের ব্লগের পুষ্টি ক্যাটাগরিতে ৭ মাস - ১ বছর বয়সী শিশুদের খাবারের তালিকা on our blog.  Don’t feed your baby potato chips, soft drinks and other packaged juices. 
  • চর্বি একটি পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান যা খাবারকে সুস্বাদু করে তোলে। অ্যাভোকাডো ফল, পনির এবং ডিমে পর্যাপ্ত পরিমানে চর্বি থাকে। বাচ্চাকে এই খাবারগুলো খেতে দিন। 
  • মাঝে মাঝে আপনি পাস্তা এবং নুডলস দিতে পারেন। এগুলো বাচ্চাদের বেশ পছন্দের খাবার। 
  • জিঙ্কের ঘাটতি বাচ্চাদের রুচি কমিয়ে দেয়। বাচ্চাদের জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে, যেমন আলমন্ড, কাজুবাদাম, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, পুঁই শাক এবং মাশরুম।
  • শিশুকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিন : গরুর মাংস, পুঁইশাক,বাদাম, মিষ্টিকুমড়া বিচি ইত্যাদি।  Children (1 to 9  years) need 7 to 10 milligrams of iron every day (সূত্র)
  • ভিটামিন ডি এর ঘাটতি ক্ষুধা হ্রাস করে। আপনার বাচ্চাকে এমন খাবার দিন যাতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ডি থাকে: সালমন ফিশ, ডিমের কুসুম এবং মাশরুম ইত্যাদি। তবে ভিটামিন ডি এর সর্বোত্তম উৎস সূর্যালোক। আমরা আমাদের বাচ্চাকে প্রতিদিন সূর্যের আলোতে নিয়ে যাই। আপনি যদি আরও জানতে আগ্রহী হন তবে আমাদের একটি পোস্ট রয়েছে বাচ্চাদের জন্য সূর্যালোকের গুরুত্ব
  • আপনার বাচ্চাকে পরিবারের সকল সদস্যের সাথে বসে খাবার গ্রহণ করতে দিন। এটি আপনার শিশুর রুচি বাড়িয়ে দিবে। তাকে কখনো আলাদা করে খাওয়াবেন না।
  • আপনার ছোট্ট সোনামনি যতটুকু খেতে চায় ঠিক ততটুকুই খেতে দিন। খাওয়ানোর সময় আপনার বাচ্চাকে কখনোই জোর করবেন না। 
  • শিশুকে তার খাবারটি পরীক্ষা এবং অনুভব করতে দিন। তাকে খাবারটি ভালোভাবে গন্ধ নিতে দিন। এটি খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বাড়াবে। 
  • খাবারের সময়টাকে একটু বিনোদনমূলক করুন। আপনার শিশুর সাথে কথা বলুন এবং তার প্রতি মনোযোগ দিন। খাবার সময় কখনই তাকে ধমক দিবেননা। 
  • খাবারের সময় টেলিভিশন এবং স্মার্টফোনগুলি বন্ধ করে দিন কারণ এগুলি মনোযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। 
  • শিশুর খাবারকে আকর্ষণীয় করুন। শাকসবজি রান্নার সময় অল্প পরিমাণে মাখন বা সস যোগ করুন। এটি খাবারকে বেশ মুখরোচক করে। শিশুর ওটমিলে কিছু কিসমিস, খেজুর এবং বাদাম দিতে পারেন। আপনি যদি আরও জানতে চান তবে আমাদের একটি পোস্ট আছে ওটমিলের উপকারিতা এবং রেসিপি সম্পর্কে
  • মাঝে মধ্যে আপনার সন্তানের (২ বছর+) সামনে খাবার রান্না করতে পারেন এবং রান্না করার সময় আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য তাকে উৎসাহিত করতে পারেন। 
  • সন্তানকে প্রতিদিন খেলতে দিতে হবে। নিয়মিত খেলাধূলা বা অনুশীলন শিশুদের ক্ষুধা বাড়ায়।
  • খাবার দেবার ৩০ মিনিট আগে পানি খাওয়ান।
  • একটি শিশু খাবার হজম করতে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা সময় নেয়। তাই ঘন ঘন খাওয়াবেননা। শিশুকে তার খাবার হজম করার সময় দিন।

কোন খাবারগুলো রুচি বাড়ায়?

  • আদা
  • দারুচিনি
  • চিনাবাদাম
  • ডালিম
  • পুদিনা পাতা

সকল মায়েরা চান তাদের বাচ্চারা লম্বা এবং শক্তিশালী হোক। শিশুদের সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাবারের প্রয়োজন। তবে খাবারে অরুচি শিশুদের মস্তিস্কের বিকাশকে বাধা দেয়। সুতরাং এই সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

15 Comments.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।