শিশুদের ওজন বৃদ্ধি নিয়ে অনেক মায়ের মাঝেই দুশ্চিন্তা দেখা যায়। তবে ওজন বৃদ্ধির আগে শিশুর হেলদি ব্যালেন্সড ডায়েট ( যার মাধ্যমে শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য ও সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সকল নিউট্রিয়েন্ট এর চাহিদা পূরন হয়) নিশ্চিত হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে মায়েদের নিশ্চিত হতে হবে। বলা হয়ে থাকে শিশুর ৬ মাস বয়সে শিশুর জন্মের ওজনের ২ গুন এবং ১ বছর বয়সে ৩ গুন বৃদ্ধি পায়। তাই বয়সের সাথে শিশুর ওজন বৃদ্ধিও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
তিন বেলা হেলদি মিলের পাশাপাশি যদি সাস্থ্যকর স্ন্যাকস সরবারহ করা হয় তাহলে অটোমেটিক্যালি শিশুর ওজন বৃদ্ধি পাবে যদি না অভ্যন্তরীন কোন সমস্যা না থেকে থাকে। এছাড়া শিশুর ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এবং ওভারঅল ফিজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য শিশুর ডায়েটে ভিটামিনস, মিনারেলস, ও প্রয়োজনীয় সব নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবারের সমাহার থাকতে হবে!!
কিভাবে শিশুর ওজন বৃদ্ধি করবেন?
অনেক শিশুর মধ্যেই বয়স ও উচ্চতার তুলনায় যথেষ্ট ওজনের ঘাটতি থাকে। প্রপার ওয়েট না হওয়ার অনেকগুলো কারন থাকে । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কারন হলো জেনেটিক কারন। অর্থাৎ শিশুর মা কিংবা বাবা –মা উভয়ই যদি আন্ডারওয়েটে হয়ে থাকেন। এছাড়াও মেটাবলিজম ওজন বৃদ্ধিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারন, অনেক শিশুর মেটাবলিজম খুব স্লো থাকে সেক্ষেত্রে এটি তাদের ওজন বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাড়ায়। আবার, শিশুর যদি কৃমি থাকে তাহলেও সেটি শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দেয়! তাই আপনার শিশু কৃমি আক্রান্ত কিনা সেদিকে নজর রাখুন!
ওজন বৃদ্ধিতে পেরেন্টসদের জন্য কিছু সাধারন টিপসঃ
- শিশুর ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটিস ও মুভমেন্ট ঠিকমত হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। কারন এতে করে, শিশুর ক্ষুদা বৃদ্ধি পাবে, যেটা শিশুকে হেলদি ও ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে!
- শিশুর ওজন বৃদ্ধির চেয়ে আগে নজর দিন শিশুকে হেলদি ব্যালেন্সড ডায়েট দেওয়া হচ্ছে কিনা! আগে শিশুর সুষম খাবার নিশ্চিত করতে হবে।
- শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে সুইমিং, সাইকেলিং ইত্যাদির সাথে অভ্যস্ত করান। এতে করে শিশুর মেটাবলিজম বৃদ্ধি হবে এবং শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে!
শিশুর ওজন বৃদ্ধি করবে যেসব খাবারঃ
শিশুর খাদ্য তালিকা তৈরী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে এই তালিকায় শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনস মিনারেলস সহ গুরুত্বপূর্ণ সকল নিউট্রিয়েন্ট থাকে। সুষম খাদ্য তালিকার পাশাপাশি পেরেন্টস দের নজর রাখতে হবে খাবারের প্রেজেন্টেশন যাতে শিশুদের নজর কাড়ে, অর্থাৎ আপনার ছোট্ট সোনামনির ডিশ টা যাতে কালারফুল ও হেলদি হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। অনেক বাবা– মায়েরা শিশুর ওজন দ্রুত বৃদ্ধির জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি ঝুঁকে থাকেন। ফলে আল্টিমেটলি, ভালোর চেয়ে শিশুর জন্য ক্ষতিকরই বেশি হয়ে থাকে। শিশুর ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেকগুলো হেলদি অপশন রয়েছে। শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক এমন কয়টি খাবারের নাম চলুন জেনে নেইঃ
১) ব্রেস্ট মিল্কঃ
শিশুর জন্য ব্রেস্ট–মিল্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। কারন, শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সকল নিউট্রিয়েন্ট বিদ্যমান থাকে মায়ের বুকের দুধে। বলা হয়ে থাকে কোন শিশু কতটা হেলদি ও অ্যাকটিভ সেটা নির্ভর করে সেই শিশু মায়ের বুকের পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে কিনা তার উপর। এজন্য ৬ মাস পর্যন্ত কেবল মায়ের বুক খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। শিশু ৬ মাস অতিক্রম করে ফেললে বুকের দুধের পাশাপাশি সলিড ফুড দিতে হবে। ৬ মাস পরবর্তী শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সলিড ফুডের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২) কলাঃ
কলা পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন B6, কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ।এছাড়াও এটি ক্যালোরির খুব ভালো উৎস। ফলে এটি আপনার ছোট্ট সোনামনির ওজন বৃদ্ধিতে খুবই চমৎকার একটি ফুড। সলিড ফুড হিসাবে দিতে চাইলে স্ম্যাশড বা পিউরী করে আপনার শিশুকে প্রতিদিন খাওয়াতে পারেন।
৩) মিষ্টি আলুঃ
মিষ্টি আলু খুব সহজেই সিদ্ধ এবং স্ম্যাশড করা যায়। তাছাড়া এটি স্বাদে অনন্য, পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ, সহজে হজমযোগ্য! এছাড়া ও মিষ্টি আলুতে ভিটামিন–এ, ভিটামিন–সি, ভিটামিন B6, কপার, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজের মত গুরুত্বপূর্ণ সব নিউট্রিয়েন্ট, যা ওজন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
৪) ডালঃ
ডাল পুষ্টিগুনে ভরপুর। ডাল প্রোটিন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। আপনার শিশুকে ডাল স্যুপ অথবা ডাল পানি খাওয়াতে পারেন, অথবা ডাল–চালের সাথে মিক্সড খিচুড়ি / সবজি খিচুড়ি দিতে পারেন। এটি সহজে হজমযোগ্য যা আপনার শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫) ঘিঃ
ঘি উচ্চ পুষ্টিগুন সম্পন্ন। শিশুর ৮ মাস বয়সে হতে শিশুকে ঘি এর সাথে পরিচয় করান। ফ্রুটস / ভেজিটেবল স্ম্যাশড, পিউরী কিংবা মিক্সড খিচুড়ির সাথে ১/২ ড্রপ ঘি এড করলে এতে পুষ্টিগুন অনেকটাই বেড়ে যায়। বাজারের ঘি নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলে সবচেয়ে ভালো হয় বাসার তৈরী ঘি বা মালাই ক্রিম ব্যাবহার করা। আপনার ছোট্ট সোনামনির ওজন বৃদ্ধিতে ঘি হতে পারে চমৎকার অপশন।
৬) ডেইরীঃ
আপনার শিশুর বয়স ১ বছরে পৌছালে খাদ্যতালিকায় ডেইরী জাতীয় প্রোডাক্ট যেমন দই রাখতে পারেন। দই প্রোবায়োটিকস এর খুব ভালো উৎস, এটি শিশুর ডাইজেশনে সহায়তা করে এবং ওজন বৃদ্ধিতে ও সহায়ক। এছাড়া শিশুর ১২ মাস পেরোলেই তাকে বাটার, চিজ ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন। ডেইরী প্রোডাক্টস শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমানে খাওয়াতে হবে, অথবা আপনার শিশুর যদি হজমে সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই অভিজ্ঞের পরামর্শ নিবেন।
৭) ডিমঃ
প্রোটিনের খুব ভালো উৎস ডিম। এছাড়াও ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিনস, মিনারেলস বিদ্যমান। ডিমের সাহায্যে অনেক টেস্টি ও বাচ্চাদের পছন্দের আইটেম বানানো যায়। তাই ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশুর প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ডিমের জুড়ি নেই!
৮) বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারঃ
কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, আখরোট, এপ্রিকটস । এছাড়া বীজের মধ্যে কুমড়ো বিচি, তিল, চিয়া সীডস ইত্যাদিতে প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট বিদ্যমান যা শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে খুব ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বীজগুলো পাউডার করে বিভিন্ন খাবারের সাথে এড করে দেওয়া যেতে পারে কিংবা দুধের সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন।
৯) অ্যাভোকোডোঃ
অ্যাভোকোডোতে ভিটামিন B6, ই, সি,কে, ফোলেট, কপার, ডায়েটরী ফাইবার, এবং প্যান্টাথোনিক অ্যাসিড এবং ফ্যাট বিদ্যুমান যা শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
১০) চিকেনঃ
চিকেন হচ্ছে শিশুদের সহজে হজমযোগ্য প্রোটিন। যা শিশুদের মাসল এবং হেলদি ওয়েট গেইন করতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ওজন বৃদ্ধিতে চিকেনের বিভিন্ন আইটেম সালাদ সহকারে দিতে পারেন।
১১) মৌসুমি ফল ও সবজিঃ
মৌসুমি ফল ও সবজিতে ন্যাচারাল সুগার, ভিটামিনস, মিনারেলস, ফাইবার রয়েছে যা ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই আপনার শিশুর খাদ্য তালিকায় পাকা পেঁপে, আম, আনারস, আপেল ইত্যাদি রাখার চেষ্টা করবেন। এতে করে শিশুর ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি সুষম খাবার চাহিদাও পূরন হবে। এছাড়া শিশুর ও পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করতে সকল ধরনের নিউট্রিয়েন্ট – প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস সমৃদ্ধ ডায়েট তৈরী করুন!
সর্বোপরি শিশুর ওজন বৃদ্ধির চেয়ে সুষম খাবারের প্রতি নজর দিন। দৈনিক তিন বেলা সুষম খাবার নিশ্চিত করতে পারলে শিশুর ওজন বৃদ্ধি নিয়ে মায়েদের খুব একটা চিন্তা করতে হয় না! তাই আপনার শিশুর খাদ্য তালিকা পর্যাপ্ত নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ কিনা সেদিকে আগে নজর দিন!
চিকেন বলতে কোন চিকেন দেওয়া যাবে ব্রয়লার টা কি দেওয়া যাবে