আমাদের দেশে শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে মায়েরা বেশ দুশ্চিন্তায় ভোগেন। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রূপে মায়েরা কিছু প্রশ্ন করে থাকেন, যেমন: বাচ্চাকে কবে থেকে কৃমির ওষুধ দেয়া যায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় কোন কোন খাবার দিতে হবে, ডায়রিয়ার চিকিৎসা, Folic Acid ও Probiotics কি, কোন কোন খাবার বাচ্চাদের ওজন বাড়ায় ইত্যাদি। এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ব্লগ টি পড়ুন এবং শেয়ার করুন।
১. কবে থেকে শিশুদের কৃমির ওষুধ দেয়া যায়?
উত্তর: ২ বছর +
২. ফলিক অ্যাসিড কি?
উত্তর: ফলিক অ্যাসিড এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শিশুদের মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের কিছু জন্মগত সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। ডাক্তাররা সাধারণত মায়েদের প্রেগন্যান্সির আগে এটি দিয়ে থাকেন। আমাদের শিশুর রুচি বাড়ানোর জন্যও শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এটি দিয়েছিলো।
৩. Probiotics (প্রোবায়োটিক্স ) কি?
উত্তর: প্রোবায়োটিক্স আপনার শিশুর শরীর এবং হজমের জন্য ভালো। প্রোবায়োটিক্সকে “ভাল” বা “সহায়ক” ব্যাকটিরিয়া বলা হয় কারণ তারা শিশুদের অন্ত্র সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। আমাদের সন্তানের যখন ডায়রিয়া হয়েছিল, তখন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাকে Probio ক্যাপসুল দিয়েছিলো। এটি খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং শিশুদের সুস্থ করে তোলে। এছাড়া আমাদের সন্তানের খাবার রুচি বাড়ানোর জন্যও ডাক্তার প্রোবায়োটিক্স দিয়েছিলো।
৪. বেশিরভাগ শিশুরই কি খাবারে অরুচি হয়ে থাকে ?
উত্তর: হাঁ , বেশির ভাগ শিশুরই কোনো না কোনো সময়ে খাবারই অরুচি হয়ে থাকে। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের ফেইসবুক গ্রূপে একটি জরিপ চালিয়েছি। সেখানে ২৯ জন অভিভাবক জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৩৪.৪৮% অভিভাবক বলেছেন যে তাদের সন্তান কোনো কিছুই খেতে চায়না। ১৩.৭৯% অভিভাবক বলেছেন যে তাদের সন্তান বুকের দুধ বা ফর্মূলা ছাড়া কোনো কিছুই খেতে চায় না।
শিশুদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য , ডেভেলপমেন্ট , শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য পেতে আমাদের ফেইসবুক গ্রূপ ভিসিট করুন:
https://www.facebook.com/groups/smartparentingclub
৫. শিশুদের খাবারের অরুচির কারণ সমূহ কি কি?
উত্তর: খাবারের প্রতি অরুচির কারণসমূহ:
- জিঙ্কের অভাব।
- আয়রন এর অভাব।
- দাঁত উঠার সময় অরুচি হয়।
- যেকোনো রকম শারীরিক অসুস্থতা।
- কিছু খাবার এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে যা শিশুদের অরুচির কারণ হতে পারে।
৬. কোন খাবারগুলো রুচি বাড়ায়?
উত্তর:
- আদা
- দারুচিনি
- চিনাবাদাম
- ডালিম, কমলা
- পুদিনা পাতা
৭. শিশুদের খাবারের রুচি বাড়ানোর জন্য ডাক্তাররা সাধারণত কি কি ওষুধ দিয়ে থাকেন?
উত্তর: শিশুর অরুচি হলে ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন আপনার চিকিত্সক পরামর্শ দিলে কেবলমাত্র তখনি আপনার বাচ্চাকে ওষুধ দেওয়া উচিত।
আমাদের সন্তানের ২২ মাসে খাবারের রুচি একদম চলে গিয়েছিলো। তখন পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ আমাদের শিশুকে ৪টি ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়াতে উপদেশ দিয়েছিলেন:
- Multivitamins & Minerals- (Nutrum Junior ১০০ ml Syrup ): ১ মাস
- Folic Acid -(Folison ৫ mg tablet ): ১ মাস
- Probiotic Combination – Protexin Restore, Sachests ১ gm )- ১৫ দিন
- ইসবগুল প্লাস
৮. ডায়রিয়ার সময় শিশুদের কোন কোন খাবার দেয়া যায়?
উত্তর:
- কলার পিউরি
- কাঁচকলা খিচুড়ি
- ওটস পরিজ
- মুরগি
- বুকের দুধ/ ফর্মুলা মিল্ক
- ভাত
- সাবুদানা পরিজ
৯. ডায়রিয়া হলে শিশুদের ওষুধ দেয়া যাবে ?
উত্তর: শিশুর ডায়রিয়া হলে ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন আপনার চিকিত্সক পরামর্শ দিলে কেবলমাত্র তখনি আপনার বাচ্চাকে ওষুধ দেওয়া উচিত।
আমাদের ছেলের ১১ মাসে ডায়রিয়া হয়েছিল। সেই সময় আমাদের সন্তানের প্রথম দাঁত উঠে। সে সবকিছু তার মুখে নিতো এবং এটি ছিল ডায়রিয়ার কারণ। এই সময় দৈনিক তার ৪–৫ বার পাতলা পায়খানা হতো এবং পায়খানার সাথে মিউকাস বা শ্লেষ্মা যেত।
আমাদের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাকে Probio ক্যাপসুল এবং ওরস্যালাইন–এন দিয়েছিলো। Probio ক্যাপসুল একটি supplement যা ভাল ব্যাকটিরিয়া দ্বারা গঠিত। এই ভাল ব্যাকটিরিয়া খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং শিশুদের সুস্থ করে তোলে।
১০. কোন কোন খাবার শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে?
উত্তর: খেজুর, ওটমিল, নাশপাতি, ব্রকোলি , মিষ্টি আলু। এককথায় ফাইবার যুক্ত খাবার দিতে হবে কারণ ফাইবার শিশুদের মল নরম করে। এর সাথে প্রচুর পানি পান করাতে হবে।
১১. অনেক ১-২ বছর বয়সী শিশুর সারাদিনে অনেক প্রস্রাব হয়। এমনকি ১০-১২ বার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটা কি স্বাভাবিক?
উত্তর: হাঁ , স্বাভাবিক। তবে সন্দেহ থাকলে ডাক্তার দেখাবেন। আমাদের সন্তানের প্রস্রাব গরমকালে সারাদিনে ১০-১২ বার এবং শীতকালে ১৪-১৫ বার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
১২. খাবার সময় শিশু বমি করে দেয়। এটা স্বাভাবিক?
উত্তর: মাঝে মাঝে করলে স্বাভাবিক। তবে প্রতিদিন বা ঘন ঘন করলে ডাক্তার দেখাবেন।
১৩. আমার সন্তানের ২–৪ দিন পরপর পায়খানা হয়। এটা কি গুরুতর সমস্যা?
উত্তর: না,এটি গুরুতর সমস্যা নয়। আমাদের সন্তানের বয়স যখন ৮–১২ মাস ছিল, তখন সেও ২–৪ দিন পরপর পায়খানা করতো। আস্তে আস্তে সময়ের সাথে সাথে তা ঠিক হয়ে গেছে। এখন তার বয়স ২৩ মাস এবং সে প্রতিদিন পায়খানা করে।
১৪. বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে প্রতিদিন গোসল করানো যাবে?
উত্তর: হাঁ, ঠান্ডা লাগলেও বাচ্চাদের হালকা গরম পানিতে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে।
১৫. কোন কোন খাদ্য শিশুদের ওজন বাড়ায়?
উত্তর: বুকের দুধ, কলা, খেজুর, এভোকাডো ফল, মিষ্টি আলু, ঘি, মাখন, ডিম , কাঠ বাদাম, আখরোট, মুরগির মাংস।
১৬. বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাস একটি মরণঘাতী রোগ। ভারতের মতো অবস্থা হলে আমাদের দেশেও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কোন কোন খাদ্য প্রাকৃতিকভাবে মা এবং শিশুর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়?
উত্তর: বীট , কাঠবাদাম, আখরোট, ব্রকোলি, গাজর, ডালিম, স্ট্রবেরি, ক্র্যানবেরি, আদা, রসুন এবং তৈলাক্ত মাছ। এর সাথে প্রতিদিন প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হবে।
আপনাদের মতামত জানান এবং আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।