শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার 

আপনি যদি কখনো কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জানেন, সেটা কতটা বিরক্তিকর !! তাহলে ভাবুন সেটা আপনার ছোট শিশুর জন্য কতটা যন্ত্রনাদায়ক হতে পারে!

আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ করনীয়। তাহলে চলুন জেনে নেইঃ

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যে লক্ষণগুলো বড়দের চেয়ে অতটা ভিন্ন নয়। তবে প্রধান পার্থক্য হলো শিশুরা ঠিক বুঝতে পারে না যে কি ঘটছে। অথবা তাদের সমস্যার কথা বলতে ও পারে না। তাই পেরেন্টসদের নজর রাখতে হবে যে তার শিশুর বাউল মুভমেন্টে সঠিক আছে কিনা! 

  

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের কিছু লক্ষনঃ

ব্রেস্টফেড শিশুদের যখন সলিড ফুড দেওয়া শুরু করা হয় সাধারণত ওই সময় টায় তাদের   কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। 

নিম্নের লক্ষণগুলো যদি আপনার শিশুর মধ্যে দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছেঃ

১) পায়খানার সময় শিশুর অস্বস্তি দেখা যায়। 

২) পায়খানার সময় শিশু কান্না করে। 

৩) পায়খানা শক্ত ও শুকনো হলে। 

৪) অনেক দেরীতে পায়খানা করে কিংবা ২/৩ দিন করেই না। 

 

টডলারদের যেসব লক্ষন প্রকাশ পায়ঃ 

সাধারণত শিশুদের মধ্যে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় টডলারদের( ১-৪ বছরের শিশুর) ক্ষেত্রেও একই হতে পারে। তবে কিছু অতিরিক্ত লক্ষন ও প্রকাশ পায়। সেগুলো হলোঃ-

১) অনিয়মিত পায়খানা হওয়া। 

২) স্টোমাকে  এবং পেটে ব্যাথা হওয়া। 

৩) পায়খানার সাথে সামান্য রক্ত যাওয়া। 

 

৫-৭ বছরের শিশুদের যেসব লক্ষন প্রকাশ পায়ঃ 

শিশু এবং টডলারদের ক্ষেত্রে যেসব লক্ষন উল্লেখ করা হয়েছে এক্ষেত্রেও একই লক্ষন প্রকাশ পেতে পারে। সাধারণত  এ বয়সের শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনূভুত হয় এবং পায়খানার সাথে সামান্য রক্ত ও যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের টয়লেট যাওয়া বন্ধই হয়ে যায় প্রায়!  

 

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারনঃ

বিভিন্ন কারণে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এখানে কোষ্ঠকাঠিন্যের  কিছু সাধারন কারণ তুলে ধরা হলঃ

 

১) দৈনিক খাদ্যতালিকাঃ

মূলত শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রধান কারণই হলো শিশুকে অনেক বেশি প্রসেসড ফুড (বার্গার, পিজ্জা, স্যান্ডুয়েজ), ডেইরী প্রোডাক্টস, কম ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো ইত্যাদি! এছাড়াও পর্যাপ্ত তরল জাতীয় খাবাররের অভাবেও শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। 

২) শিশুর অস্বস্তিঃ

অনেক সময় শিশুরা খেলতে থাকলে তখন সে বাথরুমে যাওয়া চেপে রাখে,এতে করে পরবর্তীতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। আবার, অনেক শিশু স্কুল কিংবা পাবলিক টয়লেট ইউস করতে কমফোর্ট ফিল করে না, এবং বাথরুম চেপে রাখে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যে রুপ নিতে পারে! কখনো কখনো শিশুরা ভয়ে বাথরুম করতে চায় না কারণ, যদি আগের মত আবার ব্যথা অনূভুত হয়। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য আরো জটিলতর হতে থাকে। 

৩) স্থানান্তরিত হলেঃ

কোন ভ্যাকেশনে কিংবা বেড়াতে গেলে  নতুন টয়লেট ইউস করতে অনেক শিশু অনাগ্রহ প্রকাশ করে। ফলে বাথরুম চেপে রাখে, এবং এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। 

৪) কায়িক পরিশ্রমের ঘাটতিঃ

ব্যায়াম কিংবা ফিজিকাল অ্যাকটিভিটিস শিশুর গ্রহনকৃত খাদ্য হজমে সহায়তা করে, ফলে ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত হয়। তাই যথেষ্ট ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটিস না করা হলেও শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। 

৫) অসুস্থতাঃ

কোন কারনে বেশ কয়েকদিন অসুস্থ থাকলে শিশুর ক্ষুধা হ্রাস পায়, ফলে ঠিকমত খাবার গ্রহন করে না। ফলশ্রুতিতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। 

) ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

অনেক সময় কিছু কিছু ঔষধের হাই ডোজের কারনেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। 

শিশু এবং টডলারদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কিছু করণীয় :

কোষ্ঠকাঠিন্য শিশু এবং টডলার দের জন্য কষ্টের এবং অসহ্যনীয় একটি সমস্যা। তবে শিশুর দৈনিক খাদ্যতালিকা এবং কিছু অ্যাকটিভিটিসের মাধ্যমে শিশুর স্টুল অনেকাংশেই নরম করা সম্ভব, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া ও সম্ভব।

তাই চলুন কোষ্ঠকাঠিন্যে কিছু করনীয় জেনে নেইঃ

১) বেশি পানি পান করাঃ

কোষ্ঠকাঠিন্যে শিশুর পায়খান শক্ত ও ড্রাই হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বেশি বেশি পানি পান করলে সেটি স্টুল কে নরম করতে সাহায্য করবে, ফলে স্টুল পাস করতে শিশুর জন্য সহজ হবে। 

২) খাদ্যতালিকায় বেশি করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখাঃ

 শিশুর খাদ্যতালিকায় বেশি ফাইবার রাখতে হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে- আপেল, খেজুর, নাশপাতি, গাজর, টমেটো , ভুট্টা , আম, শীম, হোল গ্রেইন ফুড, ওটমিল, ব্রোকলি, অ্যাভোকোডো ইত্যাদি! এছাড়া আপনার বাচ্চার খাদ্য তালিকায় দই রাখতে পারেন। কারন এটি প্রো-বায়োটিকের খুব ভালো উৎস হওয়ায় এটি বাচ্চার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত করবে। এছাড়া ও ফলের সাথে ফলের জুস খাওয়াতে হবে। ফলের জুসে সরবিটল নামক উপাদান থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

আপেল পিউরি এবং ওটমিল শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  আপেল পিউরি এবং ওটমিল পরিজ রেসিপি জানতে নিচের লিংক দুইটি ক্লিক করুন:

https://smartparenting.family/bn/apple-puree-recipe-benefits/

https://smartparenting.family/bn/oats-porridge-recipe-benefits/

৩) রাইস জাতীয় সিরিয়াল খাবার কমানোঃ

এ জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার ফলেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।কারন, এতে ফাইবারের পরিমান খুব কম থাকে। এছাড়া ও রিফাইন্ড-( সুগার, রাইস, চিনি এবং রুটি) এভোয়েড করবেন। তাই আপনার শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে তার খাদ্য তালিকা থেকে সিরিয়াল জাতীয় খাবারের পাশাপাশি প্রসেসড এবং রিফাইন্ড ফুড বাদ দিবেন। 

৪) বাইরে খেলাধুলা করাঃ

আপনার শিশুকে দৈনিক ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা বাইরে খেলতে দিন। শরীরের সঞ্চালন হলে সেটা বাউল মুভমেন্টে ও উপকারি ভূমিকা পালন করে। 

৫) নিয়মিত বাথরুম যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ

আপনার শিশুকে দিনে ২/৩ বার বাথরুম যেতে উৎসাহী করুন। বিশেষ করে মিলের কিছু সময় পর। এতে করে তার নিয়মিত বাথরুম যাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের ও ঝুঁকি হ্রাস পাবে। 

৬) অভিজ্ঞের পরামর্শ নিনঃ

যখন আপনার শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য জটিল আকার ধারন করবে তখন অবহেলা না করে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞের কাছ থেকে ডায়েট কিংবা মেডিসিনের সাজেশন নিতে ভুলবেন না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *